সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তবে মিন্নিসহ ছয় আসামির সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কারাবিধি অনুযায়ী তাঁদের দেওয়া হয়েছে থালা, বাটি, কম্বল ও দুই সেট জামাকাপড়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে কারাগার থেকে মায়ের সঙ্গে ফোনে পাঁচ মিনিট কথা বলেছেন মিন্নি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারাগারের যে বিশেষ কক্ষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়, সেটাকে কনডেম সেল বলে। কনডেম সেলের বন্দিরা কখনো সেল থেকে বাইরে বের হতে পারেন না। এসব বন্দি মাসে একবার তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সপ্তাহে একবার তাঁরা ফোনে স্বজনদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কথা বলতে পারেন। সে হিসেবে আজ সকালে মিন্নি তাঁর মা-বাবার সঙ্গে ফোনে পাঁচ মিনিট কথা বলেছেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় দেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। এসময় মিন্নিসহ সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পরেই আদালত থেকে পৃথকভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ/ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা। পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন। এ কারণে মামলা থেকে পরে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিলেও ফেসবুকে এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন। দেশব্যাপী ওঠে সমালোচনার ঝড়। এরপর চেকপোস্টে কড়া নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে একে একে ধরা পড়েন অভিযুক্তরা।
হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গত বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশলাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে গত বছরের ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত বছরের ২০ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিন একই আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী। এরপর ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনের পর থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাড়িতে ছিলেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী সদর থানার কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) হুমাউন কবির গত ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন।
Leave a Reply